সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন,সারা দেশে একসাথে বিদ্যুৎ এর সাটডাউন,পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা চাকুরিচুত,গ্রেপ্তার এবং রিমান্ড ইত্যাদি। আমরা দেশের সাধারণ জনগণ এসব বিষয়ে জনলেও আমরা মূলত জানি না দেশের সকল পল্লী বিদ্যুৎ এর কর্মীরা কেন এই আন্দোলন করছে। তারই প্রেক্ষিতে এবার পল্লী বিদ্যুতের আন্দোলন এর প্রক্ষাপট প্রকাশ করেছ আন্দোলনকারীরা।
মূলত তাদের অভিযোগ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা আরইবি বাংলাদেশের সংবিধান লংঘন ও সরকারী বিভিন্ন নির্দেশনা অমান্য করে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের উপর নির্যাতন চালায়। এছাড়াও আরইবির বিভিন্ন প্রকল্পে ও মালামাল ক্রয়ে নানা রকম অনিয়ম দূর্নীতির কথা তুলে ধরেন তারা।এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের ফলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে নানা রকম হয়রানী ও গ্রাহকের তোপের মধ্যে পড়তে হয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের অথচ আরইবি পল্লী বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলেও আরইবি বা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে কোনো গ্রাহক চিনেনই না।ফলে দূর্নীতির সকল অভিযোগের দায় পল্লী বিদ্যুতকেই নিতে হয়। এবং আরইবির এই সকল দূর্নীতি নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের কারনে দিন দিন বাড়ছে গ্রাহকদের হয়রানি,ব্যহত হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ ফলে মাঠ পর্যায়ে থেকে গ্রাহক সেবা দেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পরেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।
এছাড়াও তারা বলেছে আরইবি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে একই কাজে নিয়োজিত কর্মীদের তিনটি ভাগে বিভক্ত করে ( যেমন নিয়মিত, চুক্তিভিত্তিক ও কাজ নাই মুজুরি নাই ) বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে যার ফলে এদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ।এছাড়া তারা সরাসরি গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকলেও তাদের যথাযথ পদমর্যাদা না দেওয়ায় তারা সব সময়ই তাদের প্রাপ্য সম্মান পান না বরং সকল জায়গায় অসম্মানিত হন বলে তারা জানিয়েছেন। মূলত তারা এই সব কারণেই দুই দফা দাবি নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আন্দোলনে নেমেছে তারা।
Table of Contents
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন এর প্রেক্ষাপট ও ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ
নিচে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের দেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন এর প্রেক্ষাপট ও ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ তুলে ধরা হলোঃ
১. গত ২৮/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তাগনের পদনাম/পদবী এবং পদমর্যাদা নির্ধানের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করা হলে আরইবি হতে এজিএম (আইটি) সাকিল ও এজিএম (অর্থ) সুখদেবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং আরো দুইজন কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তাগন ২৪/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ তৎকালীন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং ২৯/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাদের দাবী সংবলিত স্মারকলিপির বিপরীতে কোন আলোচনা বা ব্যবস্থা না নিয়ে আরইবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীগনকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিতে থাকেন এবং এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর দুইজন কর্মকর্তাকে ০৩/০৫/২০৪ খ্রিঃ তারিখ রাত ১০টায় আরইবিতে সংযুক্ত করে আদেশ জারী করা হয়।
৩. গত ০৪/০৫/০২৪খ্রিঃ তারিখ মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আরইবির পরিচালক এস্কেন্দার আলীসহ আরো কয়েকজন বিনা নোটিশে অতর্কিতভাবে প্রবেশ করে এজিএম (ইএন্ডসি) রাজন কুমার দাস সহ আরো কয়েকজনের ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ জব্দ করে নিয়ে যায় এবং দেখে নেবার হুমকি দেয়।
৪. গত ০৫/০৫/২০২৪ খ্রিঃ সারাদেশে প্রায় সবগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ও আরইবির পলিসি প্রণয়নে অদক্ষতা স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা নির্মানের কারণে গ্রাহক হয়রানির বিরুদ্ধে (গ্রাহকসেবা সম্পূর্ণ চালু রেখে) কর্মবিরতি শুরু হয় এবং ০৭/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে আবারো বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ০৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে আরইবিতে সংযুক্ত করে আদেশ জারি করা হয়।
৫. বিষয়টি তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তার প্রতিনিধির সাথে ১০/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সভা হয়। সভায় উপরোল্লিখিত সাসপেন্ড,সংযুক্ত,স্ট্যান্ড রিলিজ সকলকে ০৭ দিনের মধ্যে অব্যহতি দিয়ে স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবী গুলোর ১৫ দিনের মধ্যে আবার আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয় । ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা কর্মবিরতির প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যায়।
৬. কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হলে আরইবি সর্বপ্রথম ১০/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তগুলো ম্যানিপুলেট করে কার্যবিবরনী জারি করে। স্মারকলিপি প্রেরণ ও কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণ করার কারনে অনেক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের চলতি দায়িত্ব থেকে নিয়মিত করা হয় নাই এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ফৌজদারি মামলা করা হবে মর্মে হুমকী-ধামকি দেন।
৭. তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃক প্রেরিত প্রতিনিধি মহোদয়ের নির্দেশনা অমান্য করে সাসপেন্ড দুইজন ও স্ট্যান্ড রিলিজ দুইজনকে আরইবি যথা সময়ে অব্যহতি দেয় নাই। ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যেক স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রতিনিধির সাথে আলোচনায় বসার কথা থাকলেও অদ্যবদি আরইবি তা করে নাই। এছাড়াও সিধান্ত মোতাবেক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৭৫৪২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ দাবী দাওয়া আরইবিতে পাঠানো হয়।
৮. সমস্যা সমাধান বা আলোচনায় বসার বিষয় নিয়ে কোন উদ্যোগ না নিয়ে আরইবি ১০/০৫/২০২৪ তারিখে সভার পরে এই সময়ের মধ্যে “বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন-২০১৩” সংশোধনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়।জবাবদিহিতার উর্ধেব গিয়ে গ্রহক এবং সমিতিগুলোকে শোষণ করার জন্য উক্ত আইনে আরইবি কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে।তন্মধ্যে একটি ধারা (৬প) এখানে উল্লেখ করা হলো। এরকম দায়মুক্তি বাংলাদেশ সরকারেরও নাই।
৯.পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য আরইবির চরম বৈষম্যমূলক পলিসি প্রণয়ন,নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা নির্মানের কারণে গ্রাহক হয়রানি এবং উপযুক্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আরইবির প্রতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আস্থা হরায়। ফলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী পুনরায় ০১/০৭/২০২৪ তারিখ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতিতে নামতে বাধ্য হয়।
১০. পুনরায় ০১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, আরইবির উর্ধতন কর্মকর্তা এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এর সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয় । এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবী হিসাবে উল্লেখ করেন।
১১। আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম করার লক্ষে গত ০১/০৮/২০২৪ তারিখে বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির কর্মকর্তার সমন্বয়ে ০৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয় ।গত ২৭/০৮/২০২৪,০৪/০৯/২০২৪,১০/০৯/২০২৪, এবং ২৬/০৯/২৪ তারিখ অনুযায়ী ০৪টি সভা আয়োজন করা হলেও আরইবির পক্ষ থেকে রিফর্ম এর কোন প্রস্তাব উপস্থাপন না করে সভাকে জানান যে , তারা রিফর্ম/সংস্কার করতে আগ্রহী নন । আরইবি বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত কমিটির সিধান্তকে অমান্য করে সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করছে এবং দেশের সর্ববৃহৎ বিতরণ সংস্থার ৪৫হাজার কর্মীর সাথে প্রহসন করে যাচ্ছে।
ফলে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের শতভাগ কর্মীর মনে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করায় কর্মপরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে । বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রধানগন একাধিকবার আরইবির চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণ করেছেন
১২) বিদ্যমান সংকট নিরসনে কোনো আশানুরূপ ব্যবস্থা না করে এবং পবিসে কোন পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি গত ১৭-১০-২০২৪ ইং তারিখ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ জনের বিনা নোটিশে আকষ্মিকভাবে চাকুরী হতে অবসান পত্রজারি করেন। আরইবি সেই সাথে পবিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা/কর্মচারীর নামে মিথ্যা ও হয়রানী মূলক মামলা করে গ্রেফতার করায়।
যার ফলে যে সমস্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগনের চাকুরী হতে অবসান পত্রজারি হয় সে সকল পবিস সহ কয়েকটি পবিসে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিকি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয় এবং বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম মহাদয়ের দাবি পুরণের আশ্বাস ও আলোচনায় অংশ গ্রহনের আহবানে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়।
সারাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হওয়ার পরেও একই দিন সন্ধ্যার পরে আরো কয়েকজনের অবসান অর্ডার ও সংযুক্ত করণ পত্রজারি করে। এখনও সারাদেশে ধরপাকড় অভিযান চলছে বিধায় পবিসের কর্মকর্তা/ কর্মচারীগনের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
১৩) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পপল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পৃথক চাকুরীবিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় আধুনিক ও টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ ব্যাহত হওয়াসহ যে সকল সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
ক) পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের শুরু থেকে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে নন-স্ট্যান্ডর্ড লাইন ও সাবস্টেশন তথা বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে আরইবির সরাসরি কোন দায়বদ্ধতা /জবাবদিহিতা না থাকায় সীমাহীন দূর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের মালামাল ( মিটার,ট্রান্সফর্মার,তার,ইন্সুলেটর,সেফটি টুলস ইত্যাদি) ক্রয় ও সরবরাহ করে আসছে। এই ননস্টান্ডার্ড বিতরণ ব্যবস্থা ও নিম্নমানের মালামালের কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জনসাধারণ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবাপ্রাপ্তির মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিদ্যুৎ কর্মীদের কষ্ট,দুর্দশা ও মৃত্যু ঝুকি বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
খ) আরইবি এককভাবে লাইন নির্মাণের মালামালসহ অন্যান্য সকল মালামাল ক্রয় করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকা,সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং পলিসি প্রণয়নে অদক্ষতার কারণে যথাসময়ে মালামাল ক্রয় ও সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় পবিসসমূহে প্রতিনিয়ত কোন না কোন আইটেমের ঘাটতি থাকছে,অপ্রয়োজনীয় মালামাল স্টোরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত গ্রাহকগণ কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং গ্রাহক প্রান্তে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
গ) ২০০৯ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ লক্ষ, যা বর্তমানে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ হয়েছে। প্রায় ৫ গুন গ্রাহক বৃদ্ধিতে বিতরণ লাইন ও ইকুইপমেন্টের পরিমাণও সমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে শহরের পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ জনপদেও বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে জনবলের সংখ্যা বৃদ্ধি না করায় কর্মরত কর্মচারীগণ ১২-১৬ ঘন্টা কাজ করার পরও গ্রাহকপ্রান্তে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎ কর্মী নিহতের হার বেড়েছে।
ঘ) দীর্ঘ ৪৭ বছরেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিজস্ব পরিচয় এবং পদমর্যাদা না থাকায় অন্য সকল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ, সমন্বয়ে জটিলতাসহ সকল পর্যায়ে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঙ) ২০১৫ সালে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের শ্রেণীপ্রথা বিলুপ্ত করে গ্রেডিং (১-২০) প্রদান করা হয়; যা আরইবিতে বাস্তবায়ন করা হলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এমতাবস্থায়, বিদ্যুৎ দেশের জরুরি এবং অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিবেচনায় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫,০০০ কর্মকর্তা- কর্মচারীর নিম্নোক্ত দাবি বাস্তবায়নপূর্বক দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক, টেকসই ও স্মার্ট বিতরণ ব্যবস্থা বিনিমার্ণ এবং নিরবিচ্ছিন্ন ও উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিতকল্পে এবং শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনে সম্মানিত গ্রাহক,দেশবাসী ও অন্তবর্তীকালীন সরকার,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মহোদয়ের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আজ দেশ গড়ার এই যুদ্ধে যদি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ হেরে যায় তবে হেরে যাবে দেশের ১৪ কোটি মানুষ ( প্রায় ৪ কোটি গ্রাহক ও তার পরিবার) আর যদি জিতে যায় তবে জিতে যাবে পুরা দেশ ও জাতি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ০২ দফা দাবিঃ
১. গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সন্তুষ্টি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণে সকল বৈষম্য /দ্বৈতনীতির অবসানপূর্বক আরইবি-পবিস একীভূত করে অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ন্যায় রিফর্ম করতে হবে।
২. সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ এর আন্দোলন সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্ন
১. পল্লী বিদ্যুৎ কেন এই আন্দোলন করছে?
উত্তরঃ পল্লী বিদ্যুৎ হলো সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ বিতরণকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা আরইবি দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে । তবে তাদের পরিচালনার ক্ষেত্রে আরইবি বাংলাদেশ সংবিধান ও সরকারি নির্দেশের বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো মন গড়া নিয়মে পল্লী বিদ্যুতের উপর জুলুম ও অত্যাচার করে।নিয়ম বহির্ভূত নিয়মিত পদের বিপরীতে গিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে একই পদের মধ্যে বিভিন্ন বিভেধ সৃষ্টি করেছে ইত্যাদি এসব কারণে পল্লী বিদ্যুতের ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীরা একসাথে আরইবির বিরুদ্ধে দুই দফা দাবী নিয়ে আন্দোলন করছে।
২. পল্লী বিদ্যুতের দুই দফা দাবী কী কী?
উত্তরঃ পল্লী বিদ্যুতের দুই দফা দাবী হলোঃ ১. সকল অনিয়মিত এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত করতে হবে
২.আরইবি – পবিস একই চাকুরী বিধি বা অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন ।
আরো পড়ুনঃ পল্লী বিদ্যুতের ২০ কর্মকর্তার চাকুরী অবসান করলো:BREB
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলঃ ELECTRICTY CEISIS
আমাদের ফেসবুক পেইজঃ Electricity Crisis
1 thought on “পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন এর প্রেক্ষাপট : NEW সত্য ঘটনা”