লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

BidyutSeva

Updated on:

লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

লো ভোল্টেজ সমস্যা একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক সমস্যা যা বাড়ি, অফিস, শিল্প-কারখানা এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় বাধা প্রদান করে। সাধারণত, বিদ্যুৎ সরবরাহ ২২০-২৪০ ভোল্টের মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি ১৮০ ভোল্ট বা তার চেয়েও কমে যেতে পারে। ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করে না, ওভারহিট হয়, এমনকি দীর্ঘদিন এই অবস্থায় থাকলে বৈদ্যুতিক ডিভাইস বা যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেও অতিরিক্ত লোডের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ, লক্ষণ, প্রভাব, গাণিতিক বিশ্লেষণ এবং সমাধানের বিস্তারিত আলোচনা করব।

এক নজরে পুড়ো লেখাটি পড়ুন

পড়ুনঃ- পল্লী বিদ্যুতের নতুন মিটার নিতে কত টাকা খরচ হয়?

লো ভোল্টেজ সমস্যার লক্ষণ

লো ভোল্টেজ সমস্যা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত, বিদ্যুতের ভোল্টেজ ২২০-২৪০ ভোল্টের মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু যখন এটি ১৮০ ভোল্ট বা তার নিচে নেমে যায়, তখন বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে এটি বোঝা যায়। নিচে লো-ভোল্টেজ সমস্যার লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিক ও স্বাভাবিকভাবে কাজ না করা : বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ হলে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সঠিকভাবে কাজ করে না বা ধীরগতিতে কাজ করে। বিশেষ করে, এসি, ফ্রিজ, পানির পাম্প বা মটর, ওয়াশিং মেশিন, টিভি এবং কম্পিউটারের মতো যন্ত্রপাতি ধীরগতিতে কাজ করে বা বারবার বন্ধ হয়ে যায়।লো-ভোল্টেজে চলার ফলে যন্ত্রপাতির আয়ু কমে যায়।

লো-ভোল্টেজের কারণে টিভি বা কম্পিউটারের স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কম্পিউটার ও রাউটার বারবার রিস্টার্ট নেয় বা বন্ধ হয়ে যায়।

ফ্যান ধীরগতিতে চলা : বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ হলে ফ্যান স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ধীরে বা আস্তে আস্তে ঘুরতে শুরু করে। অনেক সময় ফ্যান চালু হওয়ার পরও এটি পর্যাপ্ত বাতাস সরবরাহ করতে পারে না। আবার দীর্ঘ সময় ধরে ভোল্টেজ কম থাকলে ফ্যানের মোটর গরম হয়ে ফ্যানে অতিরিক্ত শব্দ করে। এছাড়া ফ্যানের মোটর এবং কয়েলও পুড়ে যেতে পারে।

বাতি বা বাল্বের আলো কমে যাওয়া: এক্ষেত্রে বাতিগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম উজ্জ্বল হয়, যা লো-ভোল্টেজের প্রধান লক্ষণ। এলইডি ও অন্যান্য বাতির উজ্জ্বলতা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। টিউবলাইট এবং ফিলামেন্ট বাল্ব অনেক সময় জ্বলে উঠতে দেরি করে। লো-ভোল্টেজ বেশি হলে বাতি বার বার জ্বলতে ও নিভতে পারে।

ফ্রিজ ও এসি সঠিকভাবে ঠান্ডা না করা : লো-ভোল্টেজ হলে ফ্রিজের কম্প্রেসার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে খাবার সংরক্ষণে সমস্যা হয়। এসি প্রয়োজনীয় ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করতে পারে না এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়। এসি ও ফ্রিজের কম্প্রেসার বারবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

লো ভোল্টেজ হলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসা : অনেক সময় লো-ভোল্টেজের কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অধিক বিদ্যুৎ খরচ করে। এসি, ফ্রিজ, হিটার, ওয়াশিং মেশিন বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, যা বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দেয়। মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ব্যাটারিচালিত ডিভাইস ধীরে চার্জ হয়।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি গরম হয়ে যাওয়া বা ওভারহিটিং সমস্যা : লো-ভোল্টেজে কাজ করতে গেলে মোটরচালিত যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। ইলেকট্রিক আয়রন, রাইস কুকার, ওভেন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি বেশি সময় নেয় এবং কার্যকারিতা কমে যায়। লো-ভোল্টেজের কারণে ফ্যান, মোটর বা কম্প্রেসার বেশি গরম হয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বৈদ্যুতিক মোটর ও পানির পাম্প কাজ না করা : লো-ভোল্টেজের কারণে পানির পাম্প চালু হতে সমস্যা হয় বা একবার চালু হলে ধীরগতিতে পানি সরবরাহ করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মোটর ঠিকমতো ঘুরতে পারে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় মোটর ওভারলোডের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

লো ভোল্টেজ সমস্যার লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির আয়ু কমিয়ে দেয় এবং বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় অপচয় ঘটায় এবং বিল বেশি উঠায়। যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা লো ভোল্টেজ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার, বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তন করতে হবে অথবা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। 

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরী হটলাইন নম্বর হচ্ছে ১৬৯৯৯ এবং পল্লী বিদ্যুতের হটলাইন নম্বর হলো ১৬৮৯৯ ।

লো ভোল্টেজ সমস্যার সম্ভাব্য কারণ

লো ভোল্টেজ সমস্যা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি, অতিরিক্ত লোড, লাইন লস, এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের ত্রুটি অন্যতম। নিচে লো-ভোল্টেজ সমস্যার প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো :

বিদ্যুৎ সরবরাহের দূরত্ব বেশি হলে : যদি বিদ্যুৎ গ্রাহকের অবস্থান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা ট্রান্সফরমারের থেকে অনেক দূরে হয়, তাহলে বিদ্যুৎ পরিবাহনের সময় ভোল্টেজ ড্রপ হয়ে যায়। ফলে লো ভোল্টেজ সমস্যা হয়।

অতিরিক্ত বা ওভারলোড হলে : একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যদি বিদ্যুতের চাহিদা তার সরবরাহ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে লো-ভোল্টেজ সমস্যা দেখা দেয়। একই সার্কিটে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। শিল্প-কারখানায় একসঙ্গে অনেক মেশিন চালানো হলে বিদ্যুৎ লোড বাড়ে। সন্ধ্যার সময় সব জায়গায় একসঙ্গে লাইট, ফ্যান, এসি চালানোর ফলে লো-ভোল্টেজ হতে পারে।

বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদানে ভুল বা তারের মান খারাপ হলে : লো-ভোল্টেজ সমস্যার অন্যতম কারণ হলো নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং নিম্নমানের পাতলা চিকন তার ব্যবহার করা। বৈদ্যুতিক সংযোগে পাতলা তার ব্যবহার করলে বিদ্যুতের প্রতিরোধ (Resistance) বেশি হয়, যা ভোল্টেজ ড্রপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে ভুলের কারনেও এই সমস্যা হতে পারে। আবার সংযোগকৃত তারের কোথাও যদি নিউট্রাল তার ছিড়ে যায় বা লিউট্রাল ফেইল করে তাহলে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম পাবে

ট্রান্সফরমার যদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয় এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হয়, তাহলে এটি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। অসাধু উপায়ে বিদ্যুৎ চুরি হলে বৈদ্যুতিক লোড বেড়ে যায়, যা লো-ভোল্টেজ সৃষ্টি করে। লো-ভোল্টেজের কারণে বাসা বা কারখানার বৈদ্যুতিক মোটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়
লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব : আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগও লো-ভোল্টেজ সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে। ঝড়, বজ্রপাত, ভারী বৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদির ফলে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচণ্ড গরমের সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে লো-ভোল্টেজ হতে পারে।

লো ভোল্টেজ সমস্যা সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, অতিরিক্ত লোড, নিম্নমানের সংযোগ ও আবহাওয়া জনিত কারণে হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত করা, ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক সংযোগ আপগ্রেড করা, উচ্চ মানের তার ব্যবহার করা এবং লোড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা হলে লো-ভোল্টেজ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লো ভোল্টেজের সমস্যা ও এর প্রভাব

লো ভোল্টেজ সমস্যা একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক সমস্যা যা বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা ব্যাহত করে। সাধারণত, গৃহস্থালি, শিল্প-কারখানা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে ২২০-২৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু যখন এই ভোল্টেজ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় (১৮০ ভোল্ট বা তার কম), তখন এটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সঠিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে, উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়। লো-ভোল্টেজ দীর্ঘস্থায়ী হলে, যন্ত্রপাতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং পুরো বিদ্যুৎ সিস্টেমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

লো ভোল্টেজ সমস্যা সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহের অসুবিধা, ওভারলোড, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং অব্যবস্থাপনার কারণে দেখা দেয়। এটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লো-ভোল্টেজ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার ও ক্যাপাসিটর ব্যাঙ্ক ব্যবহার, লোড ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যাকআপ পাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

লো ভোল্টেজ হলে একজন সাধারণ গ্রাহকের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বাসায় ফ্যান ধীরগতিতে চলে, লাইট স্বাভাবিকের চেয়ে ম্লান হয়ে যায়, এবং ফ্রিজ বা এসি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কম্পিউটার, টিভি, ওয়াশিং মেশিনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বারবার রিস্টার্ট নিতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পানির পাম্প চালাতে সমস্যা হয়, ফলে দৈনন্দিন পানি ব্যবহারে অসুবিধা দেখা দেয়।

দীর্ঘমেয়াদে, লো-ভোল্টেজের কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির আয়ু কমে যায় এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়, যা বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দেয়। সব মিলিয়ে, লো-ভোল্টেজ একজন সাধারণ গ্রাহকের জীবনকে অস্বস্তিকর করে তোলে এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়।লো-ভোল্টেজ সমস্যার প্রভাব বিভিন্ন খাতে ভিন্নভাবে দেখা যায়। গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা এবং চিকিৎসা খাতেও এটি গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করে।

লো-ভোল্টেজ সমস্যার গাণিতিক বিশ্লেষণ

লো-ভোল্টেজ সমস্যা বুঝতে এবং তা সমাধান করতে গাণিতিক বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ কীভাবে ঘটে, এটি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করা হয়। এখানে আমরা ভোল্টেজ ড্রপের সূত্র, উদাহরণসহ বিশদভাবে আলোচনা করব।

ভোল্টেজ ড্রপ কী এবং এটি কীভাবে ঘটে?

যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে, তখন পরিবাহকের (তারের) অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ (Resistance) এবং রিঅ্যাকট্যান্স (Reactance) এর কারণে কিছু ভোল্টেজ নষ্ট হয়ে যায়। এটাই ভোল্টেজ ড্রপ নামে পরিচিত।

ভোল্টেজ ড্রপ হলে গ্রাহক পর্যায়ে পাওয়া ভোল্টেজ কমে যায়, যা লো ভোল্টেজ জনিত সমস্যা তৈরি করে।

ভোল্টেজ ড্রপ নির্ণয়ের সূত্র

ভোল্টেজ ড্রপ গণনার জন্য সাধারণত ওহমের সূত্র (Ohm’s Law) এবং ভোল্টেজ ড্রপ ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়।

* ওহমের সূত্র : 

ওহমের সূত্র অনুযায়ী,
V=I×R
যেখানে,
V = ভোল্টেজ ড্রপ (Volt)
I = কারেন্ট (Ampere)
R = রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিবন্ধকতা (Ohm)

** সাধারণ ভোল্টেজ ড্রপ সূত্র :

V d =I×(2×R×L)

যেখানে,

V d = ভোল্টেজ ড্রপ (Volt)
I = কারেন্ট (Ampere)
R = তারের একক দৈর্ঘ্যের রেজিস্ট্যান্স (Ohm/meter)
L = তারের মোট দৈর্ঘ্য (Meter)

এখানে ২ গুণ করা হয়েছে কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দুটি লাইনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। একটি লাইভ (Live) এবং অপরটি নিউট্রাল (Neutral)।
লো ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়
লো ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

একটি বাস্তব উদাহরণসহ গাণিতিক বিশ্লেষণ

সমস্যা :
ধরা যাক, একটি বাসায় ১০ অ্যাম্পিয়ার (A) কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগের তারের রেজিস্ট্যান্স ০.৫ ওহম/১০০ মিটার। যদি ট্রান্সফরমার থেকে বাসার দূরত্ব ২০০ মিটার হয়, তাহলে মোট ভোল্টেজ ড্রপ কত হবে?

সমাধান :

দেওয়া আছে,

I = ১০A
R = ০.৫ Ω/১০০ মিটার
L = ২০০ মিটার

প্রথমে, প্রতি মিটারে রেজিস্ট্যান্স নির্ণয় করা যাক,

R = ০.৫ Ω/১০০ মিটার
​ =০.০০৫ Ω (প্রতি মিটার)

এখন, মোট রেজিস্ট্যান্স নির্ণয় করা যাক,

R total = (০.০০৫ × ২০০) Ω
= ১ Ω

এখন, ভোল্টেজ ড্রপ নির্ণয় করতে,

V d = I × ( ২ × R × L)
V d = ১০ × ( ২ × ০.০০৫ × ২০০)
V d = ১০ × ( ২ × ১)
V d = ১০ × ২
V d = ২০ V

ফলাফল :

যদি ইনপুট ভোল্টেজ ২২০V হয়, তাহলে বাসায় পৌঁছানো ভোল্টেজ হবে,

V supply = ( ২২০ − ২০ ) V
= ২০০ V

এটি লো ভোল্টেজ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ অনেক যন্ত্রপাতি ২০০V এর নিচে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।

লো ভোল্টেজ সমস্যার একটি বড় অংশ গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ভোল্টেজ ড্রপ কমাতে উন্নত তার ব্যবহার, বিদ্যুতের লোড কমানো, ট্রান্সফরমার আপগ্রেড করা এবং লাইন প্রতিরোধ কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাণিতিক বিশ্লেষণ অনুসারে, মোটা তার, কম লোড এবং উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার ব্যবহারের মাধ্যমে লো-ভোল্টেজ সমস্যা দূর করা যায় এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।

লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান

লো-ভোল্টেজ সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে সহজ ভাষায় কিছু বিস্তারিত উদাহরণসহ সমাধান দেওয়া হলোঃ-

উচ্চমানের মোটা তার ব্যবহার

অনেক সময় বিদ্যুৎ সংযোগে পাতলা ও নিম্নমানের তার ব্যবহারের কারণে ভোল্টেজ কমে যায়। যেমন, কোনো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগে যদি অল্প গেজের তার ব্যবহার করা হয়, তাহলে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সময় ভোল্টেজ ড্রপ বেশি হবে এবং ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ ঠিকমতো কাজ করবে না। এই সমস্যা সমাধানে উচ্চ গেজের কপার তার ব্যবহার করলে বিদ্যুতের প্রতিরোধ কমবে এবং ভোল্টেজ স্বাভাবিক থাকবে।

অতিরিক্ত লোড কমানো

যদি একটি অফিসে একই সার্কিটে এসি, ফ্রিজ, কম্পিউটার এবং প্রিন্টার একসঙ্গে চালানো হয়, তাহলে অতিরিক্ত লোডের কারণে ভোল্টেজ কমে যেতে পারে। এর ফলে যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে বা অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে প্রতিটি উচ্চক্ষমতার যন্ত্রপাতির জন্য আলাদা সার্কিট ব্যবহার করা উচিত এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময় একসঙ্গে অনেক ভারী লোড চালানো এড়িয়ে চলা উচিত।অতিরিক্ত লোড কমানো

ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার

যদি কোনো এলাকায় নিয়মিত লো-ভোল্টেজ সমস্যা দেখা দেয়, তবে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা একটি ভালো সমাধান হতে পারে। যেমন, কোনো বাড়িতে ২০০ ভোল্টের নিচে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে ফ্রিজ ও এসি ভালোভাবে কাজ করে না। কিন্তু যদি সেই বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগে একটি স্বয়ংক্রিয় ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার সংযোজন করা হয়, তাহলে এটি কম ভোল্টেজ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ২২০-২৪০ ভোল্টে রূপান্তরিত করতে পারে।

 ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার
ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার

বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার আপগ্রেড করা

কোনো এলাকায় যদি বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা কম থাকে এবং বেশি সংখ্যক গ্রাহক সেই লাইন থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তাহলে লো-ভোল্টেজের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, একটি গ্রামে যেখানে ১০০টি বাড়ির জন্য ৫০ কেভিএ (KVA) ট্রান্সফরমার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় লো-ভোল্টেজ সমস্যা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার (১০০ কেভিএ বা তার বেশি) স্থাপনের অনুরোধ করলে লো-ভোল্টেজ সমস্যা সমাধান হতে পারে।

উপরের উদাহরণগুলো অনুসরণ করে যদি সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে লো-ভোল্টেজ সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

বাস্তব উদাহরণ ও কেস স্টাডি

লো ভোল্টেজ সমস্যা শুধুমাত্র তাত্ত্বিক কোনো সমস্যা নয়। এটি বাস্তব জীবনে বড় ধরনের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, অফিস, কলকারখানা, হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়, যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয়।

এখানে আমরা কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ ও কেস স্টাডির মাধ্যমে লো-ভোল্টেজ সমস্যার প্রকৃত প্রভাব এবং কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করব।

কেস স্টাডি-১ : গ্রামাঞ্চলে লো-ভোল্টেজ সমস্যা ও সমাধান

সমস্যা :

বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং লোড বৃদ্ধির ফলে ভোল্টেজ অত্যন্ত কম ছিল। সাধারণত, সন্ধ্যা হলেই লাইটগুলোর আলো কম হয়ে যেত এবং ফ্রিজ, ফ্যানসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করত না। পানির পাম্পের মোটর চালু করা কঠিন হয়ে পড়ত, ফলে অনেকেই পানির জন্য ভোগান্তিতে পড়তেন।

সমাধান :

১. বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়।
২. বিদ্যুৎ লাইন আপগ্রেড করা হয় এবং পুরু তার ব্যবহার করা হয়।
৩. কিছু এলাকাতে বাড়তি লোড সরিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়, যাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কম হয়।

ফলাফল :

১. লো-ভোল্টেজ সমস্যা প্রায় ৮০% কমে যায়।
২. পানির পাম্প ঠিকমতো কাজ করতে শুরু করে।
৩. গ্রামবাসীরা এখন উন্নত বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

কেস স্টাডি- ২: টেক্সটাইল কারখানায় লো-ভোল্টেজ সমস্যা ও উৎপাদন ব্যাহত

সমস্যা:

ঢাকার আশপাশে একটি টেক্সটাইল কারখানায় নিয়মিত লো-ভোল্টেজ সমস্যার কারণে প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ রাখতে হতো। ভোল্টেজ কম থাকায় মেশিনগুলো ঠিকমতো চালানো সম্ভব ছিল না এবং বারবার বন্ধ হয়ে যেত। এতে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হচ্ছিল।

সমাধান:

১. কারখানায় একটি স্বয়ংক্রিয় ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার স্থাপন করা হয়।
২. আলাদা ক্যাপাসিটর ব্যাঙ্ক ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নত করা হয়।
৩. বিদ্যুৎ সংস্থার সাথে আলোচনা করে বিদ্যুৎ লাইনের মানোন্নয়ন করা হয়।

ফলাফল:

১. মেশিনগুলোর কার্যকারিতা বেড়ে যায় এবং উৎপাদন স্বাভাবিক হয়।
২. অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে।
৩. বার্ষিক উৎপাদনশীলতা প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পায়।

কেস স্টাডি- ৩: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লো-ভোল্টেজ সমস্যা ও ডিজিটাল ক্লাসরুমে ব্যাঘাত

সমস্যা :

একটি সরকারি কলেজে লো ভোল্টেজের কারণে ডিজিটাল ক্লাসরুম ও ল্যাবের কম্পিউটার, প্রজেক্টর এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল এবং ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম ব্যর্থ হচ্ছিল।

সমাধান :

১. কলেজের জন্য স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর স্থাপন করা হয়।
২. প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার সংযুক্ত করা হয়।
৩. বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত করা হয়।

ফলাফল :

১. ডিজিটাল ক্লাসরুমের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।
২. শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার গতি বাড়ে।
৩. পরীক্ষার সময় বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে সমস্যায় পড়তে হয়নি।

কেস স্টাডি- ৪: কৃষি জমিতে সেচ পাম্পে লো-ভোল্টেজ সমস্যা

সমস্যা :

একটি কৃষি সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত পানির পাম্প লো-ভোল্টেজের কারণে সঠিকভাবে কাজ করছিল না। এতে ফসলের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল এবং কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

সমাধান :

১. পাম্পের জন্য ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার স্থাপন করা হয়।
২. বিদ্যুৎ সংযোগ আপগ্রেড করা হয় এবং সরাসরি উচ্চ ভোল্টেজের লাইন ব্যবহার করা হয়।
৩. সেচ পাম্পের জন্য সোলার প্যানেল ব্যাকআপ সিস্টেম সংযোজন করা হয়।

ফলাফল:

১. সেচ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হতে থাকে।
২. কৃষকদের উৎপাদন ব্যাহত হয়নি।
৩. দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ খরচ কমে এসেছে।

উপরের কেস স্টাডিগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, লো-ভোল্টেজ সমস্যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি সমাধান করা সম্ভব। ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, উন্নত ট্রান্সফরমার, ক্যাপাসিটর ব্যাঙ্ক, এবং লোড ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে লো-ভোল্টেজ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়। ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এই সমস্যা সহজেই দূর করা সম্ভব।

লো ভোল্টেজ সমস্যা সম্পর্কিত ০৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. লো ভোল্টেজ কী?

লো-ভোল্টেজ হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে বিদ্যুতের সরবরাহকারী ভোল্টেজ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম হয়। সাধারণত বাসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ২২০-২৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু যদি ভোল্টেজ ১৮০ বা তার নিচে নেমে যায়, তাহলে একে লো-ভোল্টেজ বলা হয়।

২. লো ভোল্টেজ হলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির কী হয়?

লো ভোল্টেজ হলে,

  • ফ্যান ধীর গতিতে চলে।
  • এলইডি এবং অন্যান্য লাইট স্বাভাবিকের চেয়ে কম উজ্জ্বল হয়।
  • এসি এবং ফ্রিজ যথাযথভাবে ঠান্ডা করতে পারে না।
  • মোটর চালিত যন্ত্রপাতি (পানির পাম্প, মেশিন) চালু হতে দেরি করে বা বন্ধ হয়ে যায়।
  • যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লো ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়
লো ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়

৩. ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার কীভাবে কাজ করে?

ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার এমন একটি ডিভাইস যা ইনপুট ভোল্টেজ কম হলে সেটিকে স্বাভাবিক মাত্রায় উন্নীত করে এবং অতিরিক্ত ভোল্টেজ হলে সেটি কমিয়ে দেয়। এটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে সঠিক ভোল্টেজ সরবরাহ নিশ্চিত করে, ফলে যন্ত্রপাতি নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

৪. লো ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ নষ্ট হতে পারে কি?

হ্যাঁ, লো-ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজের কম্প্রেসার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে।

৫.  বৈদ্যুতিক সংযোগে কোন ধরনের তার ব্যবহার করা উচিত?

  • নির্ধারিত ক্ষমতা অনুযায়ী যথাযথ গেজের তার ব্যবহার করা উচিত।
  • কপার (তামার) তার অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় ভালো পরিবাহিতা নিশ্চিত করে, তাই কপার তার বেশি কার্যকর।
  • ওভারলোড এড়ানোর জন্য মোটা ও ভালো মানের তার ব্যবহার করা উচিত।

৬. কীভাবে বুঝব যে আমাদের বাসায় লো ভোল্টেজ সমস্যা রয়েছে?

  • ঘরের বাতি স্বাভাবিকের চেয়ে ম্লান দেখালে।
  • ফ্যান ধীরগতিতে চললে।
  • ফ্রিজের কম্প্রেসার বারবার বন্ধ হয়ে গেলে।
  • পানির পাম্প ঠিকমতো কাজ না করলে।
  • ভোল্টমিটার দিয়ে মাপলে যদি ভোল্টেজ ২২০ ভোল্টের নিচে থাকে।

৭. কারখানায় লো ভোল্টেজ প্রতিরোধের উপায় কী?

কারখানায় লো ভোল্টেজ প্রতিরোধের উপায়গুলো হলোঃ-

  • উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা।
  • লোড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা।
  • ক্যাপাসিটর ব্যাঙ্ক ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নত করা।
  • ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা।
  • বিদ্যুৎ সংযোগের তারের মান উন্নত করা।

শেষ কথা

লো ভোল্টেজ সমস্যা একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক সমস্যা, যা বাসা-বাড়ি, অফিস, শিল্প-কারখানা এবং কৃষি খাতে নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে। এটি মূলত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটি, অতিরিক্ত লোড, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সংযোগ, লাইন লস এবং ট্রান্সফরমারের অপর্যাপ্ত ক্ষমতার কারণে ঘটে। লো-ভোল্টেজের ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ওভারহিট হয়, দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।

এই সমস্যার সমাধানে উচ্চমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার, অতিরিক্ত লোড কমানো, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার সংযোজন, ট্রান্সফরমার আপগ্রেড এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে লাইন উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে লো ভোল্টেজ সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব, যা বিদ্যুতের কার্যকারিতা বাড়িয়ে সাধারণ গ্রাহক ও শিল্পখাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

1 thought on “লো ভোল্টেজ সমস্যার কারণ ও সমাধান | ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার উপায়”

Leave a Comment