বিদ্যুৎ বিলের ডিমান্ড চার্জ কী? ডিমান্ড চার্জ কীভাবে নির্ধারণ হয় ও কেন এটি দিতে হয়? সহজ ভাষায় ডিমান্ড চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখনই পড়ুন।
সূচিপত্র
আমরা সকলই জানি বাংলাদেশের সকল বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের থেকে ব্যবহৃত বিদ্যুতের নীট বিলের সাথে অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জ যুক্ত করে এবং গ্রাহকদের তা পরিশোধ করতে হয়। অনেকেই এই ডিমান্ড চার্জ কী তা জানেন না। তাই আমরা আজ ডিমান্ড চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
আমরা সকলেই জানি বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বে তা উৎপাদন,সঞ্চালন ও বিতরণ করতে হয় এবং বিদ্যুৎ কখনো জমা রাখা যায় না অর্থাৎ যখন যা উৎপাদন হবে তখনি তাই ব্যবহার করতে হবে আর তা ব্যবহার করতে না পারলে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নষ্ট বা লস হয়ে যায় আবার চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন করলে উৎপাদনের তুলনায় অতিরিক্ত চাহিদাকৃত অংশে বিদ্যুৎ সরবারহ করা সম্ভব হয় না ফলে লোডশেডিং করতে হয় বা লাইন বন্ধ রাখতে হয়।
তার মানে বুঝায় আমারা কী পরিমানে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকতে হবে এবং তারা আমাদের পর্যন্ত সেই পরিমানে বিদ্যুৎ সরবারাহ করবে। এবং সেই পরিমান বিদ্যুৎ আমাদের পর্যন্ত পৌচ্ছাতে বিদ্যুৎ উপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট, বিদ্যুতের লাইন, উপকেন্দ্র,ট্রান্সফরমার,জনবল ইত্যাদি সব কিছু প্রস্তুুত করে রাখবে।
এখন আমরা সকলেই জানি বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বা মিটার নেওয়ার সময় আমরা কি পরিমানে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো তা বিদ্যুৎ অফিস জানতে চায় এবং আমাদেরকে সেই লোডের বিপরীতে জামানত জমা দিতে হয় । বর্তমানে আবাসিকের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট এর জন্য ৪৮০ টাকা জমা দিতে হয়। অর্থাৎ এই জামানতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ অফিসের সাথে আমাদের একটি চুক্তি হয় যে আমি এই নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো। এর ফলে বিদ্যুৎ অফিস আপনার চাহিদাকৃত লোড বা চুক্তিবদ্ধ লোড অনু্যায়ী আপনাকে যত ধরনের ইকুইপমেন্ট,মিটার,ট্রান্সফরমার,মালামাল ইত্যাদি প্রয়োজন হয় তা দিবে এবং সার্বক্ষনিক তা প্রস্তত করে রাখবে এবং আপানার জন্য সেই পরিমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
বিদ্যু বিলে ডিমান্ড চার্জ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
আর এই সকল কারনে বিদ্যুৎ খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং অপচয় কমানো,ভারসাম্যপূর্ণ চাহিদা বজায় রাখা ইত্যাদির জন্য সরকার এই চুক্তিবদ্ধলোডের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি বা চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেটাকে ডিমান্ড চার্জ বলা হয়। বর্তমানে এই ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ প্রতি কিলোওয়াট ডিমান্ডের জন্য ৪২ টকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে কেউ যদি এই চুক্তিবদ্ধ লোডের তুলনায় বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তখন তাকে তার জন্য ০১ বা এক কিলোওয়াটের অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়।
উদাহরণসরূপঃ ধরুন, আপনি ০১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তিবদ্ধ লোড হিসাবে নিয়েছেন, কিন্ত আপনি বাসাবাড়িতে অনেক ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করেন । ফলে আপনার মিটার থেকে ০২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বা লোড ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ আপনি ০১ কিলোওয়াট অতিরিক্ত ব্যবহার করছেন। তাহলে আপনাকে কত টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে আপানার ব্যবহৃত ০২ কিলোওয়াটের জন্য ৪২*২= ৮৪ টাকা দিতে হবে এবং ০১ কিলোওয়াটের জরিমানা দিতে হবে অর্থা এই ৮৪ টাকার সাথে ৪২ টাকা যোগ করে মোট ১২৬ টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি ঢাকা থেকে খুলনা ট্রেনে যাবেন, বাচ্ছাসহ চারটি সিট নিলেন, বাচ্ছাকে মাঝে মধ্য বসালেন আবার মাঝে মধ্যে কোলে করেও নিলেন, কিন্ত ভাড়া পুরো রাস্তার দিলেন। তেমনি বাসায় সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ইত্যাদির জন্য মোট ২ কিলোওয়াট পরিমান সুবিধা সৃষটি করে নিলেন। কিন্ত সাধারনত প্রতিদিন ব্যাবহার করেন ১ কিলোওয়াট। কিন্ত আপনার ডিমান্ড যেহতু ২ কিলোওয়াট। তাই ডিমান্ড চার্জ ২ কিলোওয়াট এর উপর এই ধরা হবে। তবে বেশি ব্যবহার করলে তার জন্য জরিমানা দিতে হবে।
বিদ্যুৎ অফিস কিভাবে নির্ধারণ করে যে কার কতটুকু ডিমান্ড ব্যবহার হচ্ছে?
হাজার হাজার গ্রাহকের মধ্যে কে কতটুকু লোড ব্যবহার করছে তা বিদ্যুৎ অফিস কীভাবে নির্দধারণ করে ? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই আছে। এটি মূলত বিদ্যুতের মিটার দ্বারা পরিমাপ করা হয়ে থাকে ।
আমরা আমাদের বাড়িতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে বিদ্যুতের মিটার দ্বারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করি সেটি যদি ডিজিটাল বা স্মার্ট এনার্জি মিটার থাকে। তাহলে সেই মিটারে ডিমান্ড কিলো ওয়াট ও পরিমাপ হয়। বিদ্যুৎ অফিস সেখান থেকে রিডিং সংগ্রহ করে। এছাড়া যেসকল মিটারে এই ডিমান্ড কিলোওয়াট পরিমাপ হয় না তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ইউনিট অনুযায়ী এটা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ১ থেকে ১৬২ ইউনিট পর্যন্ত ১ কিলোওয়াট, ১৬৩ থেকে ২৮১ ইউনিট পর্যন্ত ২ কিলোওয়াট এবং ২৮২ থেকে ৪২১ ইউনিট পর্যন্ত ০৩ কিলোওয়াট ইত্যদি ডিমান্ড বিদ্যুৎ ব্যবহার ধরে হিসাব করা হয়।
ডিমান্ড চার্জ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা
চুক্তিবদ্ধ লোড হচ্ছে আমরা বিদ্যুৎ এর মিটার নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ অফিস তথা সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চেয়ে নিই বা চুক্তিবদ্ধ হই, যে আমি এই পরিমানে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো সেটাকে চুক্তিবদ্ধ লোড বা ডিমান্ড বলে। আমরা বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য সাধারণত ০১ বা ০২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাই এর অর্থ হচ্ছে সরকার আমার বা আপনার জন্য ০১ বা ০২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ রেখে দিবে। সেটা আমি বা আপনি ব্যবহার করি বা না করি। তার মানে সরকারকে আপনার বরাদ্দকৃত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করাই লাগবে। সেজন্য তার একটা খরচ করতে হয়।
আপনার পিছনে সেই খরচের কিছুটা অংশ সরকার আপনার কাছে থেকে নিয়ে থাকে যা আপনার ডিমান্ডের উপর নির্ধারিত সেটাই হচ্ছে ডিমান্ড চার্জ। এখন আমরা বলতে পারি যে, আমি যেটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি তার বিল তো দিচ্ছি তাহলে এই ডিমান্ড চার্জ কেনো ? এটা উত্তর হচ্ছে আপনি যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন সেটা তা তো দেবেন কিন্তু যা আপনার জন্যে রেখে দেওয়া হয়েছে তার খরচ অল্প হলেও দিন।
আপনারা জানেন ইতিপূর্বে আমাদের মিনিমাম একটা বিল নির্ধারণ করা ছিলো অর্থাৎ আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও একটি নির্দিষ্ট বিল দেওয়া লাগতো বর্তমানে সেটা বাতিল হয়ে গিয়েছে এট আর দেওয়া লাগে না। মিনিমাম বিল বা চার্জ যেহেতু আপনাকে এখন আর দিতে হচ্ছে না সেহেতু আপনার জন্য যে পাওয়ার আপনার দোড় গোঁড়ায় অপেক্ষা করছে তার জন্য সরকার একটি নির্দিষ্ট চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে আর এটাই হচ্ছে ডিমান্ড চার্জ।
অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জ হলো গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের উপর নির্ধারিত চার্জ।ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের জন্য, বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের মিটারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে। এই সীমা হলো গ্রাহকের চুক্তিবদ্ধ লোড। চুক্তিবদ্ধ লোড নির্ধারণের সময়, বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে।
বাংলাদেশে, ডিমান্ড চার্জ প্রতি কিলোওয়াট প্রতি মাসে ৪২ টাকা। অর্থাৎ, যদি একজন গ্রাহকের চুক্তিবদ্ধ লোড ২ কিলোওয়াট হয়, তাহলে তার প্রতি মাসে ডিমান্ড চার্জ হবে ৮৪ টাকা।
ডিমান্ড চার্জের পাশাপাশি, বিদ্যুৎ বিলে আরও কিছু চার্জ থাকে:
- ইউনিট চার্জ
- ভ্যাট
- মিটার ভাড়া
- ট্রান্সফরমার ভাড়া
- বিবিধ বিল/ফি
- পাওয়ার ফ্যাক্টর সারচার্জ
- বিলম্ব মাসুল ইত্যাদি
ডিমান্ড চার্জের কারণে, যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের বিদ্যুৎ বিলও বেশি হয়। তাই ডিমান্ড চার্জ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া এবং চুক্তিবদ্ধ লোডের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ না ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের একটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
উপরোক্ত আলোচনাটি আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিদ্যুৎ সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে নিয়মিত ফলো করুন আমাদের Bidyutseva.com ওয়েবসাইট , ইউটিউব চ্যানেল
ELECTRICTY CRISIS এবং ফেসবুক পেইজ Electricity Crisis
1 thought on “বিদ্যুৎ বিলের ডিমান্ড চার্জ কী ? ডিমান্ড চার্জ কেন দিতে হয়?”