বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

BidyutSeva

Updated on:

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

বিদ্যুৎ বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ? কীভাবে দ্রুত পুনঃরায় সংযোগ সংযোগ নেওয়া যায় এবং কত টাকা খরচ বা জরিমানা দিতে হয় তা জেনে নিন এখনই ।

ভুমিকা

বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারনে দেশের সকল বিদ্যুৎ বিতরনকারী প্রতিষ্ঠানই প্রায় নিয়মিত ভাবেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। তবে পল্লী বিদ্যুৎ যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করে তাই তাদের গ্রাহক সংখ্যাও বেশি যা প্রায় ৩.৫ কোটি ।

এই বিশাল জনগোষ্ঠির অধিকাংশই গ্রামের, তাই দারিদ্রতা, অসচ্ছলতা, অভাবে বা বিভিন্ন কারনে তারা বিদ্যুৎ বিল বেশি বকেয়া রাখে এজন্য পল্লী বিদ্যুৎ তাদের সিস্টেম এবং অফিসিয়াল কার্যক্রম সঠিক রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নিয়মিত বা প্রায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন এর অভিযান পরিচালনা করে।

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?
বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের বিদ্যুৎ মিটারের সংযোগ বিচ্ছন্ন হচ্ছে । কিন্তু তারা পরবর্তীতে কিভাবে সংযোগ নিবে বা সংযোগ নিতে কত টাকা খরচ হয়? কথায় যেতে হবে এসব জানেন না যার কারনে তারা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই মানবেতার জীবন যাপন করছেন। তাই আজ আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো।আশা করি বিস্তারিত জানতে একটু সময় নিয়ে পুরোটা পড়বেন।

ইনশাল্লাহ এটা পড়ার পর এ বিষয়ে আপনাদের আর অজানা বা প্রশ্ন থাকবে না। তবুও যদি কো বিষয়ে না বুজতে পারেন তাহলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।

বিল বাকি থাকলে কেন মিটারের লাইন কেটে দেয়?

অনেকেই বলে থাকেন, বিদ্যুৎ বিল বাকি রাখলে বা নির্ধারিত সময়ের পরে বিল দিলে তো বিদ্যুৎ অফিস বিলম্ব মাশুল বা জরিমানা সহ বিল নেয় তাহলে লাইন কাটবে কেন? আসলে মূলত সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতের ৯৫% মিটারই পোস্ট পেইড ফলে তারা গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেয় পরে গ্রাহকের থেকে টাকা বা বিল নেয় ।

আর পল্লী বিদ্যুৎ হলো একটি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তাই তারা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনা বরং পিডিবি এর থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে তা সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করে এবং সরকার নির্ধারিত রেটে গ্রাহকদের থেকে বিল নেয়।

ফলে যদি গ্রাহকেরা সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে তাহলে পল্লী বিদ্যুৎ অর্থ সংকটে পড়ে যাবে এবং তারা পিডিবি এর থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে পারবে না ফলে তারা আর বিদ্যুৎ বিতরণ করতে পারবে না বা গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারবে না ফলে সারা দেশ বিদ্যুৎ বিহিন হয়ে পড়বে এজন্য তারা নিয়মিত বকেয়া আদায় কর্যক্রম পরিচালনা করে এবং কারো বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকলে তার মিটারের লাইন কেটে দেয়।

কত মাস বিল বাকি থাকলে বিদ্যুৎ এর লাইন কেটে দেয়?

মূলত কত মাস বিল বাকি থাকলে বিদ্যুৎ এর লাইন কেটে দেয় বা কাটবে এই রকম কোনো তথ্য কোথাও বলা নাই । তবে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের যে বিদ্যুৎ বিলের কপি দেয় সেখানে লিখা থাকে যে, নির্ধারিত বিলম্ব মাশুল সহ বিল পরিশোধের শেষ তারিখের মধ্যেই বিল পরিশোধ করতে হবে অন্যথায় বকেয়ার কারনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে যার আইনগত বিধান রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে পূর্বে কোনো নোটিশ দেওয়া হয় না অর্থাৎ কোনোরূপ পূর্ব নোটিশ ব্যতিতই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিলের কপিই নোটিশ হিসাবে গণ্য হবে।

বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে কত টাকা জরিমানা দিতে হয়?

বকেয়ার জন্য বিদ্যুৎ মিটারে লাইন কেটে দিলে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ভ্যাটসহ ৮২৮ টাকা নির্দিষ্ট ( DC/RC ) ফি বা জরিমানা জমা দিতে হয়। যা ইতিপূর্বে ৬৯০ টাকা ছিল সম্প্রতি এটি বাড়িয়ে ৮২৮ টাকা করা হয়েছে।

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় হচ্ছে প্রথমে আপানার বিদ্যুৎ বিলের কপিতে উল্লেখিত বিদ্যুৎ বিলের টাকা এবং জরিমানার জন্য ৮২৮ টাকা যোগাড় করতে হবে। এরপর এই টাকা নিয়ে আপনার সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে ওয়ান পয়েন্ট বা এক অবস্থানে সেবা নামক টেবিলে বা স্থানে গিয়ে বলবেন যে আপনার বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছে।

এটা বললে তারা আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করে দিবে এবং সেখানে আপনাকে কত টাকা জমা দিতে হবে তা লিখা থাকবে। এরপর আপনি সেই ফর্ম নিয়ে অফিসের ক্যাশ শাখায় গিয়ে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিল সহ ও জরিমানার ৮২৮ টাকা জরিমানা জমা দিবেন এবং সেখান থেকে রশিদ বা ক্যাশ ম্যামো সংগ্রহ করে রাখবেন।

তাহলেই আপনার কাজ শেষ এইবার আপনি বাড়ি চলে আসবেন। আর ওই দিনই অফিস থেকে আপনার সংযোগটি লাগানোর জন্য একটি অর্ডার বের হবে। এবং পরের দিন অফিস থেকে লাইনম্যান গিয়ে আপনার সংযোগটি দিয়ে আসবে। তবে যদি আপনার বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া খুবই জরুরী হয় তাহলে ওই অফিসের দায়িতবপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে গিয়ে ওই রশিদ দেখালে তারা আপনার সংযোগটি দ্রুত বা সেই দিনই দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

বিদ্যুৎ একটি জাতীয় সম্পদ তা বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করুন এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করুন এবং যদি আপনার বিল বকেয়া থাকে তাহলে বকেয়ার জন্য জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে কখনো বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না।

কারণ তারা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি রাজস্ব আদায়ের কাজে নিয়োজিত থাকে তাই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা জঘন্যতম অপরাধ এমনকি এই ধরনের অপরাধের কারণে জেল জরিমানার পাশিপাশি আপনি সারাজীবনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পাবার অধিকারো হারাতে পারেন।

উপসংহার

বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থাকে, যা গ্রাহকদের জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে। তবে, এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব। বিল পরিশোধ এবং নির্ধারিত জরিমানা (৮২৮ টাকা) পরিশোধ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা যায়।

গ্রাহকদের উচিত নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা এবং যেকোনো সমস্যা হলে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিদ্যুৎ অপচয় রোধ এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

আরো পড়ুনঃ বিদ্যুৎ বিলের ডিমান্ড চার্জ কী ? ডিমান্ড চার্জ কেন দিতে হয়?

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ? সম্পর্কে ০৫ টি FAQ (প্রশ্নোত্তর)

১. বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া কেন?

উত্তর: বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থাকে কারণ তারা সঠিক সময়ে বিল পরিশোধ না হলে পিডিবি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে পারবে না, যার ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

২. কত মাস বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়?

উত্তর: পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে না। তবে, বিদ্যুৎ বিলের কপিতে পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।

৩. বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করতে কত টাকা জরিমানা দিতে হয়?

উত্তর: বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করতে ৮২৮ টাকা জরিমানা দিতে হয়, যা ভ্যাটসহ নির্ধারিত ফি। এটি আগে ৬৯০ টাকা ছিল, কিন্তু সম্প্রতি ৮২৮ টাকা করা হয়েছে।

৪. বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

উত্তর: প্রথমে বিদ্যুৎ বিল এবং ৮২৮ টাকা জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে একটি ফর্ম পূরণ করে ক্যাশ শাখায় টাকা জমা দিতে হবে। এরপর রশিদ সংগ্রহ করে, অফিস থেকে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হবে।

৫. বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা কি আইনগতভাবে বৈধ?

উত্তর: না, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা আইনগতভাবে অপরাধ। এটি শাস্তিযোগ্য এবং এর জন্য জেল ও জরিমানা হতে পারে, এমনকি সারাজীবনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার অধিকারও হারানো যেতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনাটি আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। বিদ্যুৎ সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে নিয়মিত ফলো করুন আমাদের Bidyutseva.com ওয়েবসাইট , ইউটিউব চ্যানেল

বিল বাকির জন্য বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে করনীয় কী ?

ELECTRICTY CRISIS এবং ফেসবুক পেইজ Electricity Crisis

Leave a Comment