ভূমিকা
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থাপনা সহজতর করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পরিষেবা উন্নয়ন করা হয়েছে। পুরানো বা ত্রুটিপূর্ণ বা নষ্ট মিটার পরিবর্তন করা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিদ্যুৎ এর মিটার সঠিকভাবে কাজ না করলে বিদ্যুৎ বিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না বরং বিদ্যুৎ বিল অত্যাধিক বেশি বা কম আসতে পারে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃক মিটারের ত্রুটি লক্ষ করলে তারা ফ্রিতেই নিজ উদ্দোগে মিটার পরিবর্তন করে দেয় ।
তবে কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী বা গ্রাহক যদি মনে করেন যে, তার ব্যবহৃত মিটারে কোনো ত্রুটি হয়েছে বা বিল বেশি আসছে এবং সে যদি মিটারটি পরিবর্তন বা পরীক্ষা করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই গ্রাহককে বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে হয়।

এই গাইডে, আমরা পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, প্রক্রিয়া, আবেদন করার নিয়ম, কত টাকা খরচ হয়, কত দিন সময় লাগে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।এছাড়াও থাকবে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর (FAQ) বিভাগ। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণটা পড়ুন। আশা করি এই ব্লগটি পড়লে এই বিষয়ে আপনাদের আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এক নজরে পুরো লেখাটি পড়ুন
কেন মিটার পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে?
যেসব কারনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার প্রয়োজন হতে পারে তা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলোঃ-
১. পুরানো মিটারের ত্রুটি
দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পুরানো মিটার ঠিকমতো কাজ না করতে পারে। এতে বিদ্যুতের সঠিক রিডিং পাওয়া কঠিন হয় আবার অনেক সময় রিডিং এলোমেলো বা অস্পস্ট আসে। ফলে মিটার রিডার বিল বা রিডিং লিখতে এসে রিডিং পায় না যার কারণে অফিস থেকে গড় বিল করে ফলে হঠাত করেই বিদ্যুৎ বিল বেশি চলে আসে।
এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃকই ফ্রিতেই মিটার পরিবর্তন করে দেয় তবে এক্ষেত্রে কিছু দিন সময় লাগতে পারে।
২. বিদ্যুৎ বিলের অসঙ্গতি
অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ মিটার সঠিক রিডিং দেয় না ফলে মিটারের ডিসপ্লেতে রিডিং শূন্য হয়ে যায় বা সাদা হয়ে যায় বা স্বাভাবিকের অলুনায় কমে যায় বা অনেক বেশি হয়ে যায়। যার কারণে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বেশি আসতে পারে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃকই ফ্রিতেই মিটার পরিবর্তন করে দেয় তবে এক্ষেত্রে কিছু দিন সময় লাগতে পারে।
ফলে গ্রাহকের দীর্ঘ দিন বিদ্যুৎ বিল বেশি আসতে পারে তাই এই ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার প্রয়োজন পড়ে ফলে উক্ত ত্রুটি পূর্ণ মিটারটি ২-৫ দিনের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
৩. ভাঙ্গা বা পুড়া মিটার পরিবর্তন
বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মিটারটি অনেক সময় অধিক লোডে বা প্রাকৃতিক কারনে যেমন বৃষ্টির পানি ঢুকে বা বর্জ্যপার কারনে পুড়ে যেতে পারে আবার অনেক সময় গাছের ডাল সার্ভিস ড্রপ তারে পড়ে টান লেগে, গরু-ছাগল,কুকুর বা ভ্যান গাড়ি বা যেকোনো কিছুর ধাক্কায় বা আঘাতে বিদ্যুতের মিটারটি ভেঙ্গে যেতে পারে।
উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের মিটারটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে পারে তাই দ্রুত সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে অভিযোগ দিতে হবে অথবা সরাসরি অফিসে গিয়ে বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে হয়। ফলে অফিস থেকে গিয়ে দ্রুত মিটারটি পরিবর্তন করে দিয়ে আসবে।
৪. ডিজিটাল মিটারের সুবিধা
আধুনিক ডিজিটাল মিটার বিদ্যুতের ব্যবহার সঠিকভাবে রেকর্ড করে এবং স্বচ্ছ বিল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। এছাড়াও নতুন এবং উন্নত মিটার বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে আনতে সাহায্য করে
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া
ব্যবহৃত বিদ্যুৎ মিটারে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে প্রত্যকটা গ্রাহকেরই উচিৎ তাদের বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা । এক্ষেত্রে তাদেরকে যা যা করনীয় তা নিচে সহজভাবে ধাপে ধাপে পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করা হলোঃ
- প্রথমে যে মিটারের ত্রুটি দেখা গিয়েছে বা বিল বেশি এসেছে সেই মিটাররের সর্বোশেষ পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ নিয়ে আপানার সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হবে।
- এরপর বিদ্যুৎ অফিসের ওয়ান পয়েন্ট বা এক অবস্থানে সেবা নামক একটি ডেস্ক বা টেবিল রয়েছে সেখানে যেতে হবে।
- এবার সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারীকে বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়ে মিটারের সমস্যাটি বলতে হবে এবং আপনি যে বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে চান তা বলতে হবে।
- এবার সেখান থেকে আপনার কাছে জানতে চাইবে যে আপনার ওই মিটাররে সকল বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা আছে কি না? বিল পরিশোধ থাকলে বলবেন পরিশোধ করা আছে আর বিল পরিশোধ করা না থাকলে বিল পরিশোধ করতে হবে।
- এরপর দায়িত্বরত কর্মচারী , আপনি মিটার পরিবর্তনে আগ্রহী লিখে আপনাকে একটি এক অবস্থানে সেবা ফর্ম পূরণ করে দিবে এবং সেই ফরমে আপনাকে নির্দিষ্ট কলামে একটি সাক্ষর করতে হবে।
- এরপর ওই কর্মচারী ফর্মটি নিয়ে অফিসের বিলিং শাখায় গিয়ে , বিলিং সহকারীর থেকে আপনার মিটারটি পরিবর্তনের জন্য একটি এস্টিমেট লিখে দিবে এবং সেখানে আপানের বিল পরিশোধ আছে কিনা তা ক্লিয়ারেন্স দিবে।
- এবার এস্টিমেটে উল্লেখিত (মাত্র ২৭৬ টাকা) টাকাটি আপনাকে অফিসের ক্যাশ শাখায় জমা দিতে হবে। ক্যাশ শাখায় টাকা জমা দেওয়ার পর তারা সেখানে থেকে আপনাকে একটি মানি রিসিফট বা রশিদ দিবে , আপনি ওই রশিদটি অবশ্যই নিবেন এবং সেটি সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখে দিবেন।
- ব্যাস এইবার আপনার কাজ শেষ । হয়ে গিয়েছে আপনার বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করা । এবার আপনি বাড়ি চলে আসবেন ।
পরবর্তীতে আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে অফিস থেকে আপনার বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের জন্য বিদ্যুৎ অফিস থেকে একটি অর্ডার (CMO) বের হবে। এরপর সেই অর্ডার অনুযায়ী মিটারটি পরিবর্তনের জন্য একজন লাইনম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
লাইনম্যান সেই অর্ডার (CMO) এর সাথে একটি নতুন মিটার ইস্যু করবে এবং আপনার সংযোগস্থলে গিয়ে মিটারটি পরিবর্তন করে দিয়ে আসবে। বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের জন্য লাইনম্যাকে কোনো টাকা দিতে হবে না এবং আপনি দিবেন না।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের জন্য কত টাকা খরচ হয় এবং কত দিন সময় লাগে?
* পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার জন্য কত টাকা খরচ হয়?
২০২৫ সালের সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার জন্য ভ্যাট সর্বোমোট আবেদন ফি হিসাবে ২৭৬ টাকা নির্ধারিত। যা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ক্যাশ শাখায় জমা দিতে হয় এবং সেই টাকার একটি রশিদ পাওয়া যায়।
এইজন্য হয়রানি এড়াতে বা প্রতারিত না হতে বিদ্যুৎ অফিসের ক্যাশ শাখা ছাড়া অথবা নির্ধারিত ক্যাশ মেমো বা রশিদ ছাড়া কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন করবেন না। কেউ অতিরিক্তি টাকা দাবি করলে দিবেন না এবং সে যদি বিদ্যুৎ অফিসের কোনো কর্মচারী হয় তাহলে বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানাবেন।
প্রয়োজনে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর ১৬৯৯৯ এবং ১৬৮৯৯ এই হটলাইন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করবেন আশা করি ভালো ফল পাবেন।

** পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার পর মিটার পরিবর্তন হতে কত দিন সময় লাগে?
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার পর মিটার পরিবর্তন হতে সাধারণত আবেদন করার দিন থেকে ২-৭ দিন সময় লাগে । তবে অনেক সময় অফিসে পর্যাপ্ত মিটার মজুদ না থাকা ও অফিস ছুটি বা জনবল ঘাটতির কারনে এই সময়ের বেশী দিন লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে মিটারটি পরিবর্তন করা বেশি জরুরী হলে আবেদনের টাকা জমা দেওয়ার রশিদটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের উর্ধবতন কর্মকর্তার কাছে গিয়ে রশিদটি দেখিয়ে আপনার সমস্যার কথা বলবেন আশা করি তারা আপনার মিটারটি তাৎক্ষণিক বা ১-২ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের ব্যবস্থা করে দিবেন।
পল্লী বিদ্যুতের মিটার স্থানান্তর করার নিয়ম : বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. আমি কীভাবে বুঝব আমার মিটার পরিবর্তনের প্রয়োজন?
- যদি মিটারের রিডিং সঠিক না হয় বা আপনি সন্দেহ করেন যে বিল বেশি আসছে, তাহলে মিটার পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
২. মিটার পরিবর্তনের জন্য কী জরিমানা দিতে হয়?
- যদি মিটার ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে এবং আপনার কোনো দোষ না থাকে, তবে সাধারণত জরিমানা দিতে হয় না। তবে এটি অফিস কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে।
৩. মিটার পরিবর্তনে কতদিন সময় লাগে?
- পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের আবেদন করার পর মিটার পরিবর্তন হতে সাধারণত আবেদন করার দিন থেকে ২-৭ দিন সময় লাগে । তবে অনেক সময় অফিসে পর্যাপ্ত মিটার মজুদ না থাকা ও অফিস ছুটি বা জনবল ঘাটতির কারনে এই সময়ের বেশী দিন লাগতে পারে।
৪. যদি আবেদনপত্রে কোনো ভুল থাকে তাহলে কী হবে?
- ভুল তথ্যের কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই ফর্ম পূরণের আগে ভালোভাবে যাচাই করুন।
৫. ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের সুবিধা কী?
- ডিজিটাল মিটার সঠিক রিডিং দেয়, বিদ্যুৎ চুরি কমায় এবং বিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
৬. আবেদন কোথায় জমা দেব?
- আপনার স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ওয়ান পয়েন্ট বা এক অবস্থানে সেবা নামক একটি ডেস্ক বা টেবিল রয়েছে সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারীর নিকট থেকে নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে সেখানে আবেদন করতে হবে।
উপসংহার
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের মাধ্যমে সেবার মান আরও উন্নত করা সম্ভব। পুরানো বা ত্রুটিপূর্ণ মিটার বদলে ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ বিল এবং রিডিং স্বচ্ছ থাকে। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করলে মিটার পরিবর্তনের কাজ সহজে এবং দ্রুত সম্পন্ন হয়।
যদি আপনার মিটার পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে আজই আপনার স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে উপরে দেওয়া প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করুন। যে কোনো সমস্যা সমাধানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আপনাকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করবে।
উপরোক্ত আলোচনাটি ভালো লাগলে পোস্টটি আপনার সোসাল মিডিয়া শেয়ার করূন এবং কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।
বিদ্যুৎ সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে নিয়মিত ফলো করুন আমাদের বিদ্যুৎ সেবা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট , ইউটিউব চ্যানেল ELECTRICTY CRISIS এবং ফেসবুক পেইজ Electricity Crisis।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন ভাইয়া। ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে বোঝানোর জন্য ❤❤